আফছার হোসাইন কায়রো (মিসর) থেকে
বি-দেশ নিউজ ০৩ মে ২০২১:
শীতের হাওয়ার নাচন থামতে না থামতেই মিসরীয়দের ঘরে ঘরে হাজির হাজার বছরের ফেরাউনিক ঐতিহ্য এবং মিসরীয় ঋতুরাজ ‘শাম এল-ন্যেসিম’ (বাতাসে সুগ্রান), বা মিসরীয় বসন্ত।
প্রাচীন মিসরীয়রা খ্রিস্টপূর্ব ২৭০০ সাল থেকে এই দিনে শাম-এল-ন্যেসিম উৎসব পালন করে আসছে। রাজধানী কায়রোয় অবস্থিত গিজা’র দি গ্রেট পিড়ামিডের সাথে সূর্য কিরণের পরিমাপ করে প্রতি বছর দিনটির সঠিক তারিখ নির্ধারণ হয়ে থাকে, যা সাধারণত কপটিক অর্থোডক্সদের ইস্টার সানডের পর দিন সোমবার হয়। অর্থাৎ আজকের দিন; যে তারিখটিতে দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য সমান!
উৎসবটি প্রাচীন মিসরীয়দের কৃষি খাতের সাথে সম্পর্কিত। শাম এল-ন্যেসিম নামটি প্রাচীন মিশরীয় ভাষা আফ্রাশিয়ান থেকে উদ্ভূত হয়ে কপটিক ভাষা থেকে এসেছে। যার মূল উচ্চারণটি হল তশোম নি তশম, অর্থ হলো উদ্যানের চারণভূমি। প্রতি বছর এপ্রিল মাসের মধ্যে কিংবা শেষ সোমবার হলেও এই বছর দিনটি পালিত হলো মে মাসের প্রথম সোমবার। এই উৎসবের কোনও ধর্মীয় পটভূমি নেই। শাম এল-ন্যেসিম এর মাধ্যমেই বসন্তের সূচনা হয়, ইস্টার পরে আসে।
এই দিনে সূর্য ওঠার সাথে সাথে মিসরীয় পরিবারগুলো সবাই মিলে ফেশিখ বা রিংগা মাছ নিয়ে (অনেকটা বাংলাদেশের লনা ইলিশ মাছের মত দেখতে) পেয়াজ পাতা, লেটুস ও সিদ্ধ ডিম নিয়ে নীল নদের পাড়, চিড়িয়াখানা কিংবা বিভিন্ন উদ্যানে চলে যায়। শিশুরা সিদ্ধ ডিমের ওপরে নানা রঙের চিত্র অংকন করে এবং পরে তা ভেংগে খায়। উদ্যানগুলোতে সারা দিন খেলাধুলা, আড্ডার সাথে শাম-এল-ন্যেসিমের ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘লবণাক্ত মাছ’ পেঁয়াজ পাতা, লেটুস ও সিদ্ধ ডিম খেয়ে সন্ধ্যার পর ঘরে ফিরে আসে।
যদিও গত কয়েক বছর যাবত মিসরীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ফাসিক ও রিংগা খেতে জনগনকে নিরুৎসাহিত করছে। নোংরা পরিবেশে ফাসিক ও রিংগা তৈরী এবং প্রক্রিয়ারজাত করে বিক্রি করার পর প্রতি বছরেই শাম-এল-ন্যেসিমের পর কিছু মানুষ পেটের পিড়ায় ভোগে এবং কখনও কখনও মৃত্যু ঘটে ।
দিনটি সরকারি ছুটি হলেও এ বছর শ্রমিক দিবস, ইস্টার সানডে ও সাপ্তাহিক ছুটি এবং শাম-এল-ন্যেসিমে মিলে টানা পাঁচ দিন ছুটি কাটাল মিসরবাসী। মুসলিম ও খৃষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী এবং সামাজিক অবস্থানের নির্বিশেষে সবাই উৎসবটি এক সাথে পালন করে ।
রমজানের পবিত্রতা রক্ষা ও করোনার ভাইরাসের প্রকোপে এ বছর দিনের বেলা খোলা জায়গায় শাম-এল-ন্যেসিম পালন করতে দেখা যায়নি গোটা মিসরে।