আফছার হোসাইন কায়রো (মিশর) থেকে
বি-দেশ নিউজ ৩১ জুলাই ২০২১:
দূর পরবাসে থেকেও দেশে, নিজেদের ভিটেমাটির বেহাল দশা আমাদের কষ্ট দেয়। আজকের লেখাটি সেই কষ্ট থেকেই লেখা। কেন যেন মনে হয়, প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহেলার শিকার কিশোরগঞ্জ জেলার, করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে খ্যাত গ্রাম টামনী পশ্চিম আকন্দ পাড়া।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাস্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের অন্যতম সহচর আব্দুর রাজ্জাক কোম্পানির আমন্ত্রনে এই গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে দাড়িয়ে রাস্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য তরুনদের ডাক দিলে ১৮ জন টকবগে যুবক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং নিজেদের জীবন বাজি রেখে ছিনিয়ে আনেন মহান স্বাধীনতার লাল সূর্যটি।
অথচ আমরা কী দুর্ভাগা; সারা বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে তখনও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রামটিতে হাজার হাজার মানুষকে পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। গ্রামটিতে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি কাদা মাটিতে তলিয়ে যায়। কোন গাড়ি-রিকশা তো দুরে থাক, হেঁটেও যাওয়া যায় না ঠিকমতো। হেঁটে গেলেও জুতা খুলে চলাচল করতে হয়। অসুস্থ কোন রোগীকে হাসপাতালে নেয়াও যার পর নাই দূরহ।
প্রতি বছরই পাড়ার যুবকেরা বালু মাটি দিয়ে বার বার রাস্তা মেরামত করে সাময়িক চলাচলের উপযোগী করে তোলেন কিন্তু কিছুদিন পরই আবার নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে চলে আসছে টামনী আকন্দ পাড়ার মানুষের দূর্ভোগের জীবন।
সরকারি এই রাস্তাটির পাকা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বারবার অনুরোধ করলেও আশার বানীই মেলে শুধু।
অথচ যে ভোট কেন্দ্রে ভোট দিয়ে তারা বারবার নির্বাচিত হচ্ছেন সেই ভোট কেন্দ্রের ডানে-বামে ২০০ মিটার পর রাস্তাটির কি অবস্থা তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।
গত দুই বছর আগে রাস্তাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে, রাস্তা পরিদর্শনে ছুটে যান স্থানীয় সাংসদ ও তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী জনাব মুজিবুল হক চুন্নু। এই স্কুল মাঠে বসে গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসেন ছয় মাসের ভেতর রাস্তাটি পাকা করে দেওয়ার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সাংসদের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক রাস্তাটি পাকা করলেও অদৃশ্য কোন হাতের ইশারায় টামনী আকন্দ পাড়ার মূল ভূখণ্ডকে পাশ কাটিয়ে গ্রামের বাহির দিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও হাতে গোনা কয়েকটি বাড়ীকে সংযুক্ত করে সতেরদরিয়া-পিটুয়াকে সংযোগ করে দেয়।
তাই মুক্তিযুদ্ধা সহ গ্রামের মানুষের দাবী, টামনী পশ্চিম আকন্দ পাড়ার মূল ভূখণ্ড দিয়ে রাস্তাটি মোস্তফার বাড়ী থেকে পাকা করে, চরতালঙ্গা সেতুর সাথে সংযোগ করে দেওয়া হোক। আর মাত্র এক বা দের কিলোমিটার রাস্তা পাকা করে দিলেই হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে।
প্রবাসে বসেও ঘরের মাটির এই বেহাল দশা আমাদের সত্যিই পীড়া দেয়। এতশত উন্নয়নের ভীড়ে আমরা এমন দৃশ্য অন্তত দেখতে চাই না। আশা করি, আমাদের এই চাওয়া নীতি নির্ধারক পর্যন্ত পৌছাবে আর টামনী আকন্দ পাড়ার মানুষ মুক্তি পাবেন এই দুর্ভোগ থেকে।
আফছার হোসাইন, কায়রো প্রবাসী