আফছার হোসাইন কায়রো (মিসর) থেকে
বি-দেশ নিউজ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১:
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মৃতদেহ নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই। প্রবাসীর মৃত্যুর পর তার সাথে থাকা পরিবারের সদস্য, সহকর্মী এবং দুতাবাসকেও সেই ব্যক্তির লাশ দেশে পাঠাতে সব সময় হিমশিম খেতে হয়। নিয়োগদাতা যদি খরচ না দেন কিংবা প্রবাসী যদি বেকার ও অবৈধ থাকেন, তাহলে অনেক সময় দেশে থাকা পরিবারের সদস্যরাও টাকা খরচ করে লাশ আনতে অপারগতা প্রকাশ করে। এই টানাপোড়নে মাসের পর মাস হাসপাতালের হিমঘরে পরে থাকে রেমিটেনন্স যোদ্ধাদের লাশ, সেই করুন কাহিনীগুলো অজানাই রয়ে যায়। অনেকে আবার বিদেশ-বিভুঁই অপরিচিত অজ্ঞাত স্থানে স্বজনদের কবরস্থ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।
তেমন একটি ভাবনা থেকেই এককভাবে শুধুমাত্র বাংলাদেশীদের জন্য নির্ধারিত ও স্থায়ী কবরের জায়গা পাওয়ার উদ্যোগ চলছিলো মিসরে। বলা যায়, যেই উদ্যোগ সফল হয়েছে।
মিসরে বর্তমানে বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে বসবাস করছেন ১২ হাজারের মতো বাংলাদেশী। যার মধ্যে বেশিরভাগই নিম্ন-আয়ের পোশাক শিল্পের শ্রমিক। কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মিসরে বিভিন্ন কারণে জানা অজানা রোগে মৃত্যুবরন করেছেন ৪০ জনেরও বেশি প্রবাসী। তাদের লাশ পাঠাতেও হিমশিম খেতে হয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাসকে।
আইনের জটিলতা এবং স্থানীয় প্রথার কারণে এদেশে নিজস্ব কবর ছাড়া কাউকে দাফন করা সম্ভব হয় না। মিসরের প্রত্যেক শহরে বসবাসকারী প্রতিটি পরিবারের রয়েছে একটি করে নিজস্ব কবরস্থান, যেখানে শুধু পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়কেই শুধু কবর দেয়া যায়।
রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম ভাবতে থাকেন এ নিয়ে। বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি রেমিটেনন্স যোদ্ধাদের মৃত্যুর পর যাদের আর্থিক সঙ্গতি নেই বা অবৈধতার কারণে স্বদেশে পাঠানোর বিপুল খরচ বহন করা সম্ভব হয় না, তাদের লাশ দেশে না পাঠিয়ে কিভাবে তাদের পরিবারের সম্মতিতে এখানে দাফন করা যায় তা নিয়ে পরিকল্পনা করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জৈনিক প্রবাসী এগিয়ে আসেন মৃত বাংলাদেশী প্রবাসীদের জন্য নিজস্ব একটি কবরস্থান কিনে দিতে।
রাজধানী কায়রোর কাছে অবুর শহরে সরকারিভাবে নির্ধারিত বিশালাকার ‘দারুল হক’ কবরস্থানের একটি সামান্য অংশবিশেষ ক্রয় করে দেন তিনি। সেখানে দুতাবাসের তত্ত্বাবাধনে বাংলাদেশী প্রথা অনুযায়ী শরিয়ত সম্মতভাবে দাফনের কার্য সম্পন্ন করা হবে।
বুধবার (৮ই সেপ্টেম্বর ২০২১) দুতাবাসের অফিস কক্ষে রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলামের উপস্থিতে কবরস্থানের জমি ক্রয়ের জন্য দুইপক্ষ দলিলে সই করেন।
পরে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, মিসরে বসবাসকারী যে কোনো প্রবাসীর মৃত্যুর পর তাদের পরিবার, সহকর্মী ও নিয়োগদাতা দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ সাপেক্ষে উক্ত কবরস্থানে দাফন কার্য সম্পাদন করতে পারবেন।
রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, কবরস্থানের জায়গা ক্রয়ের জন্য মিসর প্রবাসী একজন বাংলাদেশী নাগরিক সম্পূর্ণ খরচ বহন করেছেন, যিনি তার নাম গোপন রাখার অনুরোধ করেছেন।