1. admin@b-desh.news : admin :
  2. : itsme :
  3. : wp_update-Yo7x9NAv :
মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৫০ অপরাহ্ন

অভিশপ্ত কৃপন কারুন, ঐতিহাসিক কারুন লেক ও প্রাসাদ 

আফছার হোসাইন কায়রো (মিশর) থেকে
  • আপডেট টাইমঃ মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০২২
প্রাচীন সভ্যতা, ইতিহাস, ঐতিহ্য,  প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আর অনেক নবী-রাসুলের দেশ মিশর। দেশটির রাজধানী কায়রোর ১শ ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমের জেলা ফাইয়্যুম। যা, নবী ইউসুফ (আঃ) এর শহর নামে ও পরিচিত। শহরটি পাশেই রয়েছে পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন ও বৃহত্তম একটি প্রাকৃতিক হ্রদ যার নাম বুহাইরাতুল কারুন বা কারুন হ্রদ। আর সেই  হ্রদের পাশেই রয়েছে অভিশপ্ত এক ঐতিহাসিক  প্রাসাদ। যা কাসর  ইল কারুন বা “কারুন প্রাসাদ’ নামে পরিচিত। প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন,  কসর ইল কারুন রোমান আমলের গ্রিক দেবী সোবেক ও ডায়োনেসিয়াস এর উপাসনালয় ছিল।
ইসলামি যুগে এ অঞ্চলের অধিবাসীগণ প্রাসাদটিকে কসর ইল কারুন নাম দেন। কারন, এ প্রাসাদটি বুহাইরা কারুন বা কারুন হ্রদের পাশেই অবস্থিত। মাটির উপরে তিন তলা বিশিষ্ট প্রাসাদটিতে এক শতর ও বেশি কামরা রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রাসাদটির ভিতরে কয়েকটি সুরঙ্গ পথ আবিস্কার করেছেন। মাটির নীচ দিয়ে এসব সুরঙ্গ পথ ফাইয়্যুম থেকে নিয়ে বন্দর নগরী আলেকজান্দ্রিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রাসাদটির অভ্যন্তরের সুরঙ্গে ‘কুদসুল আকদাস’ নামক বিশেষ এক স্থানে প্রতি বছর ২১ শে ডিসেম্বর শুধু ২৫ মিনিটের জন্য সূর্যের আলো পরে। প্রাসাদটির ছাদের উপর উঠে দেখা যায়, আশে পাশে শত শত ধংসাত্মক বাড়ি ঘরের চিহ্ন। যা থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, হাজার হাজার বছর আগে কি ঘটে ছিল এখানে।
জনশ্রুতি আছে, এই হ্রদেই অভিশপ্ত কারুন আল্লাহর গযবে পতিত হয়েছিল, সে জীবন্ত অবস্থাতেই মাটি তাকে ও তার সমস্ত ধন-সম্পদ গ্রাস করে।
কে সেই কারুন?
মিশরে বনী ইসরাঈল জাতির মধ্যে কাসাস নামে এক লোক ছিল। তাঁর ছিল দুই ছেলে, একজনের নাম বাশার এবং অপর ছেলের নাম ইমরান। ইমরানের ছিল আবার দুই পুত্র। এক পুত্রের নাম মুসা (আঃ) এবং অপর জনের নাম হারুন (আঃ)। অপরদিকে বাশারের ছিল একটি মাত্র ছেলে, তার নাম কারুন। অর্থাৎ কারুন ছিল হজরত মুসা (আঃ) এর আপন চাচাত ভাই।
পবিত্র কোরআন এর সূরা আল-কাসাস এ আল্লাহ পাক বলেন, নিশ্চয়ই ‘কারুন’ মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল, কিন্তু সে তাদের প্রতি জুলুম করেছিল। আমি তাকে এতটা ধন-ভাণ্ডার দান করেছিলাম, যার চাবিগুলো বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। (২৮:৭৬)
ইতিহাস বলে, প্রথমদিকে কারুন হযরত মূসা (আঃ)’র প্রতি ঈমান এনেছিল এবং তাঁর অন্যতম সাহাবী ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নিজের ধন-সম্পদের অহংকারে গর্বিত হয়ে পড়ে। তার অবস্থা এতটা খারাপ হয়ে যায় যে, আল্লাহর নবীর বিরোধিতাকারীতে পরিণত হয়। আল্লাহ পাক কারুনকে কত যে ধনরত্ন আর সম্পদ দান করেছিলেন তার হিসেব নেই।
এত বিশাল সম্পত্তি পাওয়ার পরও কারুন এতই কৃপণ ছিল যে, সমস্ত ধন-সম্পদ সে কেবল তার তোষাখানায় জমা রাখতো। ভূলেও কোনদিন তার একটি পয়সাও সৎ কাজে ব্যয় করত না। আল্লাহ তা’আলার দেয়া অগণিত ধন-সম্পদের মালিক হয়ে কারুন আল্লাহকে ভুলে গিয়ে ছিল। আল্লাহ্‌র হুকুম মত হজরত মুসা (আঃ) কারুনের কাছে গিয়ে বললো “হে কারুন, তুমি তোমার জমানো ধন-রত্ন ও মাল-সম্পদের যাকাত প্রদান কর। না হলে আল্লাহ পাক নারাজ হবেন।
পবিত্র কোরআনে এসেছে , আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন, তার দ্বারা পরলোকের কল্যাণ অনুসন্ধান করো। ইহলোকে তোমার বৈধ সম্ভোগকে উপেক্ষা করো না। আল্লাহ তোমার প্রতি যেমন সদাশয় হয়েছেন তুমি তেমনি (মানুষের প্রতি) সদাশয় হও এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করতে চেয়ো না; কারণ নিঃসন্দেহে আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টিকারীকে ভালোবাসেন না।” ( সূরা-কাসাস-৭৭)
কৃপণ কারুন জবাবে বলল -“আল্লাহর ভয় যখন দেখাচ্ছ, তখন মালের কিছু যাকাত দিতে পারি এক শর্তে।” হযরত মুসা (আঃ) বললেন,- “বলো কি তোমার শর্ত?” কারুন বলল,- আল্লাহ তোমাকে পয়গাম্বরী দান করেছেন। আর তুমি তোমার ভাই হারুনকে খিলাফত দিয়েছ। হারুনের মত আমাকেও যদি খেলাফত দাও, তাহলে আমি তোমার কথামত যাকাত দেব। হযরত মুসা (আঃ) বললেন, -“দেখ কারুন! তুমি ভুল বুঝেছ। খিলাফত বা নবুওয়াত দানের ক্ষমতা আমার নেই। আল্লাহ তাআলা যখন যাকে নবুওয়াত দেয়ার ইচ্ছা করেন, তখন তিনিই সেই গুণের অধিকারী হতে পারেন। এতে মানুষের কোন হাত নেই।
কারুন বলল, আল্লাহ যদি আমাকে খিলাফত না দেন, তবে তিনি কেন আমার কাছে যাকাত দাবী করবেন? আমি নিজের ক্ষমতা, যোগ্যতা ও কৌশলের জোরে এসব ধন-সম্পদ রোজগার করেছি।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন,‘অতঃপর আমি তাকে (কারুন) ও তার প্রাসাদকে মাটিতে ধসিয়ে দিলাম। তার স্বপক্ষে এমন কোনো দল ছিল না যে আল্লাহর শাস্তির থেকে তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না।’ (সূরা কাসাস : ৮১)।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2022 b-desh.news
Theme Customized BY — ANT