ক’দিন বাদেই ঈদ-উল আযহা। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে পিড়ামিডের দেশ মিশরে ততই বাড়ছে কোরবানির পশু বেচাকেনা। এখানে কোরবানির পশু বিক্রির আলাদা কোন হাট নেই। বড় বড় রাস্তার পাশে, মহল্লার অলি গলি, কিংবা কসাইদের দোকানের পাশে বিক্রি করা হয় কোরবানির পশু।
রাজধানী কায়রোসহ অন্যান্য শহর বা গ্রামের বাসা বাড়ির ছাদে অনেকেই পশু পালন করেন। পরিবারের জন্য দুই একটি রেখে বাকিগুলো বিক্রি করে দেন কোরবানির ঈদে। নীলনদের দক্ষিণ পাড়ে গিজা জেলায় আল-মানশি নামের একটি পশুর হাট রয়েছে। অনেকে সেখান থেকেও পশু কেনেন।
মিশরীয়দের কাছে কোরবানির জন্য সব চেয়ে পছন্দের পশু হলো খারুফ বা দুম্বা । পছন্দের তালিকায় পরের পশুগুলো গরু, উট আর মহিষ। দুম্বা মূলত এক রকমের ছাগলের জাত। এগুলো মধ্য এশিয়া, আরব উপসাগরীয় অঞ্চল ও আফ্রিকার উত্তর অংশে পালন করা হয়। দুম্বার গোশতে কিছুটা গন্ধ আছে। প্রথমবার যারা খান তাদের কিছুটা সমস্যা হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক একেকটি দুম্বার গড় ওজন ৫০ থেকে ৭৫ কেজি (জাত ভেদে), কোনোটির ওজন ১২০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
মিশরীয়রা ছাগল দিয়ে কুরবানি করে না বললেই চলে। এদেশে ছাগল, পাঠা ও বকরীতে কোন ভেদাভেদ নেই। বাংলাদেশের মাংস ভোজন রসিকদের মত ছাগলের প্রতি এদের এত আগ্রহ নেই। মিশরীয়দের পছন্দের মাংস ছোট্ট গরু বা মহিষ। এদেশে কুরবানী করার পাশাপাশি জিলহজ মাসের চাঁদ উঠার পর পরেই বিত্তবানদের মাংস কিনে গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দিতে দেখা যায়।
মিশরীয়রা কসাইয়ের দোকান থেকে মাংস কিনে সেখানেই ছোট ছোট পুটলা বানিয়ে ব্যাগে ভরে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। যখনই কোনো শ্রমিক, ঝাড়ুদার, গরিব কিংবা কর্তব্যরত সাধারণ পুলিশ বা নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত মানুষ দেখলে গাড়ি থামিয়ে তাদের হাতে তুলে দেন মাংসের ব্যাগ।
মিশরে ঈদের জামাত শেষ হওয়ার পর থেকে তিনদিন পর্যন্ত কোরবানি করে থাকেন মুসলমানেরা। বিভিন্ন মসজিদে দেখা যায় কোনো ধনাট্য ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষ থেকে তিন দিন ধরেই কোরবানি করে গরিবদের মাঝে মাংস বিলিয়ে দিতে।
সাধারণত কোরবানি ঈদের আগে মিশর সরকার পশু বেচাকেনার দাম নির্ধারণ করে দেয়। তবে মহল্লার অলিগলিতে এসবের তোয়াক্কা না করেই কিছু কম বা বেশি দামে বিক্রি করে পশু।
রাজধানী কায়রোর বিভিন্ন রাস্তা ও মহল্লার পশু বিক্রির দোকান ঘুরে দেখা গেলো খারুফ (দুম্বা) বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি বাংলাদেশি টাকায় পাঁচ শত টাকা। মাকসী (ছাগল/ পাঠা, গেদ্দী (ছাগী) বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৪শ টাকা। আর গামাল (উট), বাকারা (গরু), গামুছা (মহিষ) বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি বাংলাদেশি টাকায় ৪শ ৫০টাকা।
সরকার কর্তৃক পশুর দাম নির্ধারণ করে দিলেও বেশ দামাদামি করে পশু কিনতে হয় এদেশে। রাস্তার পাশে পশু বিক্রেতারা চেষ্টা করেন ওজনে না গিয়ে মনগড়া দামে বিক্রি করে দিতে। আবার ওজনে কম দিতেও দেখা যায় অনেক পশু বিক্রেতাকে।
উল্লেখ্য, আগামী বুধবার ঈদুল আযহা পালন করবে মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানেরা।
এ জাতীয় আরো খবর..