সাহাদুল সুহেদ
মাদ্রিদ, স্পেন: ১০ মে, ২০২০
করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো এবং জরুরী অবস্থা শিথিলতা নিয়ে ৪ ধাপের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, ভাইরাসটিতে ক্ষতিগ্রস্থের তালিকায় অন্যতম শীর্ষে থাকা দেশ স্পেন।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্র সানচেজ গত ২৮ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে জানান, দীর্ঘ প্রায় এক মাস ধরে ৪ ধাপের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় অন্য দেশের কার্যক্রম বিবেচনায় এনে স্পেনের বৈচিত্র ও বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। স্প্যানিশ নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও জীবন রক্ষা করাই এ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
‘নতুন স্বাভাবিক অবস্থা’র কথা ব্যখ্যা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, ধাপগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে পর্যায়ক্রমে জুনের শেষের দিকে পুরো দেশ নতুন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘নতুন স্বাভাবিক অবস্থা’য়ও আমাদের জীবনযাত্রা পরিবর্তিত হবে। যেমন- আমাদের বের হবার সময় মাস্ক পরে নিতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আগে যেমন বন্ধুদের সাথে বের হতাম আমরা, এখন বের হতে হবে একা বা যাদের সাথে ঘরে বসবাস করি তাদের সাথে।’
পেদ্র সানচেজের বর্ণনায় ‘নতুন স্বাভাবিক অবস্থা’য় ফিরে আসার ধাপগুলো:
শূন্য (০) ধাপ বা প্রস্তুতি ধাপ
রেস্তোরাঁগুলো টেক এওয়ে খাবার পরিবেশনের জন্য খোলা রাখা যাবে। ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন হার্ডওয়ার ষ্টোর, সেলুন খোলা রাখা যাবে। তবে আগে থেকে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিতে হবে এবং একজনের বেশি দোকানে প্রবেশ করা যাবে না। জিম সেন্টারে পৃথক শরীরচর্চার ক্ষেত্র থাকলে তা খোলা রাখা যাবে। পেশাদার লীগের খেলোয়াড়দের অনুশীলনে সুযোগ দেয়া হবে, তবে তা করতে হবে পৃথকভাবে।
আপ-১
ধাপ ১ এর প্রয়োগ শুরু হবে ১১ মে থেকে। বড় বড় শপিং সেন্টার ও কমার্শিয়াল পার্ক বাদে তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত নিয়মের মাধ্যমে খুলে দেয়া হবে। হাটেল এবং পর্যটকদের থাকার স্থানগুলো খোলা রাখা যাবে। বার রেস্তোরাঁর তেররাস থাকলে সেগুলো খোলা রাখা যাবে এবং তেররাসে ধারণক্ষমতার শতকরা ৩০% ব্যবহার করতে হবে। তবে ভেতরে গ্রাহকদের খাবার পরিবেশন করা যাবে না। একই প্রদেশে থাকা বন্ধু, আত্মীয় স্বজনদের বাসায় ভ্রমণ করা যাবে। ধারণক্ষমতার ৩০% স্থান ব্যবহার করে ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো খোলা রাখা যাবে।
ধাপ ২
২৫ মে থেকে শুরু হবে ধাপ ২ এর প্রয়োগ। বার, রেস্তোরাঁ ও এ জাতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে ভেতরের তিনভাগের একভাগ জায়গায় টেবিল বসিয়ে গ্রাহকদের সেবা দেয়া যাবে। সেপ্টেম্বরের পূর্বে অর্থাৎ চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আর খোলা থাকছে না। সিনেমা ও থিয়েটারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার এক তৃতীয়াংশ জায়গা ব্যবহার করে খোলা রাখা যাবে।
ধাপ ৩
এটা হবে শেষ ধাপ। ৮ জুন থেকে শুরু হবে এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত নতুন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসে, ততদিন এই ধাপ কার্যকর থাকবে। বাইরে ও পরিবহনে মাস্ক ব্যবহারের জন্য পরমর্শ থাকবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫০% কার্যক্রম ব্যবহার করা এবং এক গ্রাহক থেকে অন্য গ্রাহকের অবস্থানের দূরত্ব ২ মিটার নিশ্চিত করতে হবে। সিনেমা ও থিয়েটারগুলোর মোট আয়তনের ৫০% ব্যবহার করে খোলা রাখা যাবে। এ ধাপে জীবনযাত্রা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন।
এদিকে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা চলতি মাসের তিনদিন ৩, ৪ ও ৫ মে দুইশো’র কম থাকার পর ৬, ৭ ও ৮ মে আবার মৃতের সংখ্যা দুইশো’র উপর বৃদ্ধি পেয়েছে।
৯ মে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালভাদর ইয়্যা সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ২৪ ঘন্টায় দেশটিতে ২,৬৬টি জন নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ও মৃত্যু বরণ করেছেন ১৭৯ জন। আক্রান্তের হার গত ২৪ ঘন্টায় ০.২৭% বৃদ্ধি পেলেও মৃতের সংখ্যা লকডাউন চালু হওয়ার পর দ্বিতীয় সর্বনি¤œ রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে ৩ ও ৪ মে ১৬৪ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে স্পেন। ইতিমধ্যে দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬২ হাজারের উপর মানুষ। মৃতের সংখ্যাও পার হয়েছে ২৬ হাজার। তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৭৩ হাজার ১৫৭ জন মানুষ।