1. admin@b-desh.news : admin :
  2. 123@abc.com : itsme :
রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন

স্মৃতিতে লন্ডন এবং একজন আলতাব আলী

রিপোর্টারঃ
  • আপডেট টাইমঃ সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

আফছার হোসাইন
বি-দেশ নিউজ (লন্ডন থেকে)

যুক্তরাজ্য চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে কন্যার এমপিএইচ সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে আমরা গেলাম লন্ডনে। এই শহর দেখার স্বপ্ন আমার অনেক পুরোনো। সেই ১৯৮৪ সাল থেকে অপেক্ষায় ছিলাম। বাংলাদেশে বৃটিশ হাই-কমিশনে চাকরি করার সুবাদে বেশ ক’জন বিলাতির মুখে তাদের দেশের রাজধানীর গল্প শুনে শহরটা দেখার স্বপ্ন তৈরি হয়।

গেলো বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে চেস্টার রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে মাত্র দুই ঘন্টায় পৌঁছলাম ইস্টন রেলওয়ে স্টেশন। সেখান থেকে পাতাল রেলে বন্ধুবর সাইফুলের বাসায়। যিনি বৃটেনে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের ব্যাক্তিগত কর্মকর্তা। পরদিন মেঘলা আকাশ দেখেও সাইফুলকে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম হোয়াইট চ্যাপেল এলাকার উদ্দেশ্যে।

একটু আগেই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে লন্ডনের হোয়াইট চার্চ লেনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। সাইফুল ভাই জানালেন, এই এলাকায় রয়েছে এক বাঙালির অনন্যকীর্তি। সেই কীর্তি দেখাতে এক পার্কে নিয়ে গেলেন তিনি। বৃষ্টির পানিতে পার্কের গাছগুলো যেন আরও সবুজ ও সতেজ হয়ে উঠেছে। নাকে লাগছে মাটির সোঁদা গন্ধ। চোখ আটকে গেল পার্কের নাম লেখা সাইনবোর্ডে। ইংরেজিতে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘আলতাব আলী পার্ক’। সাইফুল ভাই বললেন, আলতাব আলী লন্ডনের বাঙালি অভিবাসী ছিলেন। তিনি কারখানা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। গত শতকের সত্তরের দশকে ব্রিটেনে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন চলছিল। ১৯৭৮ সালের ৪ মে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে পূর্ব লন্ডনের এডলার স্ট্রিটে অজ্ঞাত কয়েকজন বর্ণবাদীর হাতে নির্মমভাবে খুন হন তরুণ বাঙালি শ্রমিক আলতাব আলী।

বর্ণবাদী হামলায় আলতাব আলীর মৃত্যুতে বিক্ষোভে ফেটে পরে হাজার মানুষ। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন পায় নতুন মাত্রা। মানুষ রাজপথে নেমে আসে। আলতাব আলীর মৃত্যু এই আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে কাজ করে। ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে আলতাব আলীর নাম। এ জন্যই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৯৯৮ সালে পূর্ব লন্ডনের এডলার স্ট্রিটে অবস্থিত সেন্ট মেরিস পার্ককে আলতাব আলী পার্ক নামকরণ করা হয়। আলতাব আলীর মৃত্যুর পর তাঁর ছবি নিয়ে লন্ডনবাসীর বিক্ষোভে ফেটে পড়ার ছবি পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। লন্ডনে আলতাব আলীর নামে পার্ক বিদেশের মাটিতে বাঙালিদের নতুন সম্মান এন দেয়।

আলতাব আলী পার্কের ভেতর ঢুকলে মনে হবে আপনি যেন হঠাৎ করেেই একখণ্ড বাংলাদেশে পৌছে গেছেন। পার্কের চারদিকে উঁচু উঁচু গাছ। মাঠ ভরা সবুজ ঘাস। পার্কের ভেতরে রয়েছে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে একটা শহীদ মিনার। হঠাৎ দেখলে যেন মনে হবে বাংলাদেশেই আছেন আপনি। একুশে ফেব্রুয়ারিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন দিবসে এখানকার বাঙালিরা শহীদ মিনারে এসে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদ ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শহীদ মিনার এলাকায় আঁকা হয় আল্পনা। বাঙালিরা এই পার্কে এসে বসেন। গর্ব করে বলেন, এক বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে হয়েছে এই পার্কের নামকরণ।

১৯৯৯ সালে পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের দক্ষিণ অংশে নির্মাণ করা হয় এই শহীদ মিনার; যা দেশের বাইরে বানানো প্রথম শহীদ মিনার। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের তৎকালীন স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2022 b-desh.news
Theme Customized BY — ANT