তানভীর তুহিন:
“বাঙালি জন্মগতভাবেই রাজনীতির অংশ। অর্থাৎ, যেদিন ভুমিষ্ট হয় সেদিন থেকেই সে রাজনীতির হিস্যা। সেই রাজনীতি শুরু তো হয় পরিবারের ভেতরে, আস্তে আস্তে তার পরিসর বাড়তে থাকে। সে যতই বড় হয়, ততই তার রাজনৈতিক ক্ষেত্র বড় হতে থাকে।” এক গুরুস্থানীয় একজন বলেছিলেন কথাটা।
যেদিন বলেছিলেন, সেদিন বুঝিনি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কথাটি বারবার সত্য হয়ে ধরা দিয়েছে। আমাদের দেশে যে বা যিনি কোন রাজনীতিই করেন না তিনিও ‘রাজনীতির হিস্যা’। তাকে নিয়েও রাজনীতি হয় এবং আখেরে তিনিও রাজনীতির অংশ হয়ে যান কিংবা বাধ্য হন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই বাঙালি যখন দেশ ছেড়ে ভিন দেশে চলে যান, তখনও কেন তাকে রাজনীতিই করতে হবে কিংবা রাজনীতির অংশ হতে হবে? সেখানে তো তিনি গিয়েছেন কোন মহত উদ্দেশ্য নিয়ে, সেটাতেই মনোযোগি হওয়া উচিত নয় কী?
কিন্তু এ কথা কাকে বোঝাবেন। ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান বানে’ বাংলায় খুব প্রচলিত কথা তো আমাদের জন্যই লেখা, বাঙালির জন্যই লেখা। আর সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্র হোক কিংবা যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব বা কাতার, ইতালি কিংবা ফ্রান্স সব জায়গাতেই পাবেন বাংলাদেশের রাজনীতি। শুধু শ্লোগানভিত্তিক কিংবা ব্যানার ভিত্তিক রাজনীতি নয়; সেখানে রীতিমতো ধরপাকড়, হাতাহাতি, মারামারি পর্যন্ত চলে!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাঙালি অধ্যুসিত নিউইয়র্কের ‘গুলিস্তান’ হিসেবে খ্যাত জ্যাকসন হাইটসে তো প্রায়শই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া দেখেন স্থানীয়রা। পুলিশ আসে, সমাধানের চেষ্টা করেন। আবার কখনও-সখনও জেলেও পুরে দেন। কিন্তু তাতেও সেই রাজনীতি থামে না।
এমনও যদি হতো যে, সেই রাজনীতি স্থানীয় কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে বা নিউইয়র্কে সরকার গঠনকেন্দ্রিক, তাও বোঝা যেত। এমনও আছেন অনেকে, যারা স্থানীয় (অর্থাৎ ওই দেশের রাজনীতিতে) রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন এবং সাফল্য পাচ্ছেন। তাতে বরং আমাদের গর্বই হয়। কিন্তু যখন ভিনদেশে ‘দেশীয় ব্র্যান্ড’-এর রাজনীতি করতে গিয়ে ঠিক দেশের আদলে চরিত্র প্রদর্শন করেন, তখন ওই দেশের মানুষ আমাদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যারা রাজনীতি করেন না কিংবা ভিন্ন কোন উদ্দেশ নিয়ে সে দেশে গিয়েছেন তাদের জন্য বিষয়টি লজ্জার হয়। সেক্ষেত্রে কখনও কখনও তো তারা হোষ্ট কান্ট্রির ‘নিজস্ব আইন’ পর্যন্ত ভুলে যান। তখন ওই এক বা একাধিক গোষ্ঠির কারণে ‘ভুগতে হয়’ পুরো বাঙালি কমিউনিটিকে। সকলকেই ‘এক চোখে দেখা’ শুরু করে স্থানীয় আইন। তখন ঝামেলায় পরতে হয় বাকিদের।
২.
তবে হ্যা, আপনাদের দেশের কোন দলের প্রতি আগ্রহ, সমর্থন থাকতেই পারে। কোন নিদৃষ্ট ব্যাক্তি বা গোষ্টির প্রতি টান থাকতে পারে। তাদেরকে স্মরণ করতে আপনাকে নিশ্চয়ই কেউ বারণ করবে না। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যানারে রীতিমতো ‘আওয়ামী লীগ’ ‘বিএনপি’ ‘জাতীয় পার্টি’ ‘জাসদ’ কিংবা ‘বাসদ’ ব্যানারে যখন কমিটি হবে তখন তো গোল বাধবেই! সেটাই হয় দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে।
বাঙালিরা সেখানেও বিএনপি-আওয়ামীগ করে নিজেদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাাওয়ার আয়োজন করে। তাতে করে জাত যায়; সেটা আমার-আপনার, সবারই! মোদ্দা কথা গোটা দেশের। কারণ, সেখানেও আপনি শেষ পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ’কেই প্রতিনিধিত্ব করেন।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক, নিউইয়র্ক
(সম্পাদকের বার্তা: প্রিয় পাঠক, এ লেখার পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা কিংবা সমালোচনা প্রকাশে আগ্রহী। কেউ চাইলে লিখতে পারেন।)